মিলন হোসেন বেনাপোল,
যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার মিসকিন দফাদার ৪৫ বছর ধরে খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করে গুড়-পাটালি তৈরি করেন। প্রায় ১০০ টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে চলতি শীত মৌসুমের দুই মাসে ৫০ হাজার টাকার রস-গুড়-পাটালি বিক্রি করেছেন তিনি। আরও অন্তত দুই মাস সমপরিমাণ অর্থের রস, গুড় ও পাটালি বিক্রির আশা তাঁর।
শুধু মিসকিন দফাদার নন, তাঁর মতো চৌগাছা উপজেলায় অন্তত ২৫০ গাছির প্রত্যেকে এই শীত মৌসুমের প্রথম দুই মাসে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার গুড়-পাটালি বিক্রি করেছেন। স্থানীয় অন্তত ২০ জন গাছির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্রী প্রতাপ মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর যশোরে রস আহরণযোগ্য গাছের সংখ্যা বেড়েছে। গুড়ের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় গাছিদের গুড় উৎপাদনে আগ্রহ বেড়েছে। ফলে এ বছর শতকোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হবে বলে আশা করছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যশোর জেলায় ৩ হাজার ৪০ মেট্রিক টন গুড়-পাটালি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খেজুরের গুড় উৎপাদনের মৌসুম। এ বছর প্রতি কেজি গুড় গড়ে ৩০০ টাকা দরে মোট ৯১ কোটি টাকার গুড় বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে। জেলার ৬ হাজার ৩১৪ জন গাছি ৩ লাখ সাড়ে ১২ হাজার গাছ থেকে এবার রস আহরণ করছেন।
এদিকে গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যশোরের চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা চত্বরে তিন দিনের গুড়মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপজেলার ২৫০ জনের বেশি গাছি অংশ নেন।
ওই মেলায় কথা হয় গাছি মিসকিন দফাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা কঠিন পরিশ্রমের কাজ। রস থেকে গুড় তৈরি আরও কঠিন কাজ। আমার স্ত্রী ও ছেলে এ কাজে সহায়তা করে। তিন বছর ধরে চৌগাছায় গুড়মেলা হচ্ছে। মেলায় প্রচারের কারণে গুড়ের গুণগত মান বেড়েছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। দুই বছর ধরে রস-গুড়ের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি।’
চৌগাছার বাগারদাড়ি গ্রামের লিয়াকত মিয়া একাই এবার ১৬৫ টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। তিনি এই রস থেকে বিভিন্ন ধরনের পাটালি গুড় তৈরি করেন। তিল, বাদাম, নারকেল দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের পাটালি তৈরি করেন তিনি। লিয়াকত আলী বলেন, ‘তিলের পাটালির চাহিদা বেশি। সব ধরনের পাটালি গুড়ের কেজি ৫০০ টাকা। গত দুই মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকার কাঁচা রস, গুড় ও পাটালি বিক্রি করেছি।’
সাধারণত গাছির ছেলে গাছি হওয়ার প্রবণতা কম। তবে চৌগাছার বড় খানপুর গ্রামের রুবেল হোসেন তাঁর বাবা ইউসুপ আলীর পেশা ধরে রেখেছেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করে গুড়-পাটালি তৈরির কাজ করছেন। রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা অন্তত ৫০ বছর খেজুরগাছ কেটেছেন। তাঁর কাছ থেকে আমি শিখেছি। ভালো গুড় তৈরি করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এখন আর গুড় নিয়ে হাটে যেতে হয় না। মানুষ বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যায়। চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে ৪০ হাজার টাকার গুড় বিক্রি করেছি।’
স্থানীয় গাছিরা জানান, এখন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় কাঁচা রস, ৪০০ টাকায় তরল দানার গুড় ও ৫০০ টাকা কেজি পাটালি গুড় বিক্রি হচ্ছে। শীতের শেষ দিকে রসে মিষ্টতা বাড়ে। তবে ঘ্রাণ একটু কমে যায়। যে কারণে দামও একটু কম পাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন :